শিক্ষা

সর্ব কনিষ্ঠ হিসাবে বিশ্ব চাম্পিয়ন ডি গুকেশ

মাত্র ১৮ বছরেই বিশ্ব চাম্পিয়ন ডি গুকেশ

 

২০২৪ সালের ১২ই ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের সেন্টোসা দ্বীপে দাবা জগতের এক ইতিহাস রচিত হয়, যেখানে ভারতের ১৮ বছর বয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার ডি. গুকেশ চীনের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে পরাজিত করে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হন। এই জয়টি ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, গুকেশ এই জয়ের মাধ্যমে গ্যারি কাসপারভের প্রায় ৪০ বছরের পুরানো রেকর্ড ভাঙেন। কাসপারভ, যিনি দীর্ঘদিন বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, তাঁর রেকর্ডটি ছিল সবচেয়ে কম বয়সী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে।

গুকেশের এই অসাধারণ সাফল্য বিশ্ব দাবার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। ম্যাচের শেষ দিনে, গুকেশ এবং ডিং লিরেনের মধ্যে ১৪ তম ও শেষ খেলা চলছিল। ৫৮টি চাল শেষে গুকেশের হাতেই আসে সেই কাঙ্ক্ষিত জয়, এবং তিনি মোট ৭.৫ পয়েন্ট অর্জন করেন, যা ছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পয়েন্ট। ম্যাচের শেষ খেলা যদি ড্র হয়ে যেত, তবে আগামী দিনে টাই-ব্রেকারের জন্য দ্রুত দাবার খেলা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু গুকেশের সঠিক কৌশল এবং নির্ভুল খেলার কারণে, তিনি জয়লাভ করেন এবং এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হন।

ডিং লিরেন, যারা গত বছর বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন, এই ম্যাচে তাঁর সেরাটা দিতে পারেননি। গুকেশের বিরুদ্ধে তাঁর খেলা ছিল অনেকটাই নড়বড়ে, এবং শেষ পর্যন্ত তিনি পরাজয়ের সম্মুখীন হন। গুকেশ, যিনি বিশ্বের অন্যতম প্রতিভাবান তরুণ দাবাড়ু, তাঁর এই জয় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি ভারতের জন্যও একটি বড় সাফল্য। গুকেশের এই জয়ের মধ্য দিয়ে ভারত দাবি করতে পারল বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব।

গুকেশের অসাধারণ এই জয়ের পর, বিশ্ব দাবা মহল তাকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছে। ১৮ বছর বয়সে বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়া, বিশেষ করে যখন তিনি বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দাবাড়ু ডিং লিরেনকে পরাজিত করেছেন, তখন তাঁর দক্ষতা এবং মনোযোগের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি একেবারে আলাদা। গুকেশের এই সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য তরুণ দাবাড়ুদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়াবে।

গুকেশের অর্জন তার দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং কঠোর অনুশীলনের ফলস্বরূপ। অনেকেই জানেন, তিনি যে পরিমাণ সময় এবং শ্রম দিয়েছেন, তা অনেকেই কল্পনাও করতে পারবেন না। প্রতিদিনের অনুশীলন, শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগিতা, এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের দাবা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন এবং আজকের এই সফলতার মুখ দেখেছেন।

গুকেশের জন্য এই জয় শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি ভারতীয় দাবার জন্যও একটি বড় মাইলফলক। ভারতের দাবার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে এই জয়ের মাধ্যমে। গুকেশের এই অসাধারণ সাফল্য দেশব্যাপী দাবার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং আরও বেশি তরুণদের জন্য এটির প্রতি ভালোবাসা ও উৎসাহ জোগাবে।

বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়ন হওয়া কোন সহজ কাজ নয়, বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষ হিসেবে একজন অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী দাবাড়ু থাকে। তবে গুকেশের ক্ষেত্রে, তিনি তার খেলায় এক নতুন কৌশল এবং মনোযোগী দৃষ্টি প্রমাণ করেছেন, যা তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। এই জয়ের পর, গুকেশ আরও অনেক ক্রীড়াবিদ ও তরুণদের কাছে একটি আইকন হয়ে উঠবেন।

গুকেশের ভবিষ্যত নিয়ে অনেকেই অনেক আশাবাদী। তাঁর এই অভূতপূর্ব সাফল্য দাবার বিশ্বে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, এবং আগামী দিনগুলিতে আরও অনেক সফলতার অপেক্ষা রয়েছে।

Swarup

Swarup Mondal shikshasanbad.live সাইটের Owner এবং প্রফেশনাল কন্টেন্ট রাইটার। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স গ্র্যাজুয়েট ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট(double)। বর্তমানে M.S.W পাঠরত ও বিভিন্ন social Work এর সঙ্গে যুক্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button